ঠাকুরগাঁও জেলার দর্শনীয় স্থান

আজকে আমরা জানবো ঠাকুরগাঁও জেলার দর্শনীয় কিছু স্থান সম্পর্কে যা প্রাচীন যুগের রাজা,বাদশা এবং বৃটিশরা স্থাপন করেছিলেন। 



তার মধ্যে অন্যতম হলো ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস লিমিটেড। যে টি ঠাকুরগাঁও শহর থেকে ৪ মিঃ মিঃ পশ্চিমে রোড বাজার ও ঠাকুরগাঁও রোড রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন অবস্থিত। ১৯৫৬ সালে এই প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৫৮সালে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ১৯৫৯ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠান থেকে চিনি উৎপাদন শুরু হয়। ১৯৭২ সালে সরকার এই প্রতিষ্ঠানটিকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করেন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ

জামালপুর জমিদার বাড়ি জামে মসজিদ।


ঠাকুরগাঁও সদর থানার জামালপুর ইউনিয়নে রয়েছে ঐতিহাসিক এই জামালপুর জমিদার বাড়ি জামে মাসজিদ। জানা যায় যে ১৮৬৭ সালে জমিদার জামাল উদ্দীন এই ঐতিহাসিক মাসজিদ টি নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এই মাসজিদে প্রায় ৩৫ ফুট উচ্চতা ৮০ টি মিনার ও ৩ টি গম্বুজ রয়েছে।এবং বিভিন্ন নকশা করা মাসজিদের ডিজাইন দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে নেই। বর্তমানে জমিদার জামাল উদ্দীন এর বংশধরেরাই মাসজিদের দেখাশুনা করেন।

যে ভাবে যাবেন

ঠাকুরগাঁও শহর থেকে পীরগঞ্জ থানা যাওয়ার রাস্তায় শিবগঞ্জ নামে একটি বাজার রয়েছে। যার দূরত্ব ঠাকুরগাঁও শহর থেকে প্রায় ৯ কিঃ মিঃ। এর পরে শিবগঞ্জ বাজার থেকে অটো রিক্সা যোগে ৩ কিঃ মিঃ পশ্চিমে গেলেই পেয়ে যাবেন জামালপুর জমিদার বাড়ি জামে মাসজিদ।

ছোট বালিয়া জ্বীনের মসজিদ।

ঠাকুরগাঁও জেলা ভুল্লি থানার ছোট বালিয়া গ্রামে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক জ্বীনের মাসজিদ। ঠাকুরগাঁও সদর থেকে পঞ্চগড় মহাসড়ক হয়ে প্রায় ১৪ কিঃ মিঃ যাওয়ার পরে ভুল্লি বাজার, এবং ভুল্লি থানা। 

থানার পাশ দিয়ে পূর্বে প্রায় ৩.৭ কিঃ মিঃ যাওয়ার পরে এই অপরূপা সুন্দর ডিজাইন করা মাসজিদ টি চোখে পড়ে। লোক মুখে শুনা যায় কোন এক রাতে জ্বীন পরীরা এই মাসজিদের কাজ শুরু করে, এবং গম্বুজ এর কাজ শেষ হওয়ার আগেই ভোর হয়ে যায়। তখন জ্বীনেরা গম্বুজ এর কাজ বাকি রেখেই চলে যায়,ফলে গম্বুজ ছাড়ায় দাড়িয়ে থাকে এই মাসজিদ। 

জ্বীন পরীরা তৈরি করার কারনে এলাকার মানুষের কাছে জ্বিনের মাসজিদ নামেই পরিচিত এই মাসজিদ। মাসজিদে ৩ টি গম্বুজ,  ৮ টি মিনার রয়েছে। ইতিহাস থেকে যানা যায় অসমাপ্ত গম্বুজ এর কাজ সম্পুর্ণ করেন মেহের বকস চৌধুরী। 



রাজা টংনাথের রাজ বাড়ি।




ঠাকুরগাঁও জেলার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আরো একটি অন্যতম স্থান হলো রাজা টংকনাথ এর রাজ বাড়ি। যা ঠাকুরগাঁও জেলার রানিশংকৈল উপজেলায় কুলিক নদীর তীরে অবস্থিত। ঠাকুরগাঁও সদর থেকে প্রায় ৪০ কিঃ মিঃ দূরত্ব রানীশংকৈল উপজেলা, রানীশংকৈল থেকে  ১.৩ কিঃ মিঃ পূর্ব পাশে প্রায় ১০ একর জমির উপরে অবস্থিত এই রাজ বাড়ি।

 ইতিহাস থেকে জানা যায় রাজা টংকনাথের পূর্বপুরুষদের মধ্যে কেউ রাজা ছিলেন না, রাজা টংকনাথের বাবা বুদ্ধিনাথ ছিলেন গোয়ালা বংশের এক নিঃসন্তান জমিদারের মন্দিরের সেবায়েত। জমিদার যখন ভারতেত কাশি যান যাওয়ার পূর্বে তাম্রপাতে দলিল করে ন,যে আমি যদি ফিরে না আশি তাহলে এই জমিদারের দায়িত্ব পালন করবে বুদ্ধিনাথ। 

পরবর্তীতে গোয়ালা জমিদার ফিরে না আসায় দলিল অনুযায়ী বুদ্ধিনাথ হয়ে যায় জমিদার। বুদ্ধিনাথ এই রাজ বাড়ির কাজ শুরু করলেও কাজ শেষ হওয়ার আগেই তিনি মৃত্যু বরণ করেন। বুদ্ধিনাথের মৃত্যুর পরে তার ছেলে টংনাথ জমিদারের দায়িত্ব পালন করেন এবং টংকনাথ ১৯১৫ সালে রাজ বাড়ির কাজ সম্পন্ন করেন। ১৯২৫ সালে বৃটিশ সরকার টংকনাথকে চৌধুরী উপাধী দেন এবং দিনাজপুরের মহারাজা গিরিজনাথ রায়ের কাছ থেকে রাজা উপাধি অর্জন করেন।

ঠাকুরগাঁওয়ে এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ আম গাছ।




এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় এবং প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন সূর্য্যপূরী আম গাছ টি ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাংগী থানায় অবস্থিত। ঠাকুরগাঁও সদর থেকে প্রায় ২০ কিঃ মিঃ পশ্চিমে বালিয়াডাংগী থানা। বালিয়াডাংগী থেকে আরো প্রায় ১২ কিঃ মিঃ পশ্চিমে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা হরিণমারি নামক যায়গায় এই সর্ববৃহৎ আম গাছটির বয়স সম্পর্কে কেউই সঠিক তথ্য দিতে পারেনা।

তবে ধারণা করা যায় যে এই গাছটির বয়স ২০০ বছরেরও বেশি। এই বিশাল আকারের আম গাছটি প্রায় ২ বিঘার ও বেশি যায়গা জুড়ে বিস্তৃত। আম গাছটির উচ্চতা প্রায় ৮০থেকে ৯০ ফুট। এই বিশাল আকারের আম গাছটি দেখার জন্য আসে দেশের বিভিন্ন যায়গা থেকে প্রতিনিয়ত অসংখ্য দর্শনার্থী।

 আগত দর্শনার্থীদের কাছ থেকে গাছটি দেখার জন্য টিকিট সিস্টেম করা হয়েছে। জন প্রতি টিকিটের মূল্য ৩০ টাকা মাত্র। পৈতৃক সূত্রে বর্তমানে এই গাছটির মালিক দুই ভাই (১) সাইদুর রহমান (২) নুর ইসলাম। গাছের মালিক বলেন তারা প্রতি বছরে লাখ টাকারাও বেশি আম বিক্রি করেন।

রাণীশংকৈল রামরায় দিঘি।




ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়ন এ অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী রামরায় দিঘি যা রাণীসাগর নামেও পরিচিত। রাণীশংকৈল উপজেলা থেকে প্রায় ৪ কিঃ মিঃ উত্তর পশ্চিমে উত্তরগাঁও গ্রামের নিকটেই অবস্থিত বরেন্দ্র অঞ্চলের ২য় বৃহৎ জলাশয় রামরায় দিঘি। এই দিঘিটি কত পুরনো তা সঠিক ভাবে কেউ বলতে পারে না।

তবে ধারণা করা হয় যে এটি প্রায় ৮০০ থেকে ১০০০ বছরের পুরনো। অপরূপ এই দিঘিটি প্রায় ৪২ একর যায়গা ধরে বিস্তৃত, অতীতে এই দিঘিটি সাধারন মানুষের পানির কষ্ট দূর করেছে। আর দিঘিটিকে কেন্দ্র করে ২০০৩ সালে রাণী সাগর ফাউন্ডেশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান গঠণ করা হয়।

উক্ত প্রতিষ্ঠান এর অধিনে পুকুরটির চতুর্পাশে প্রাইয় ১২শর অধিক লিচু গাছ সহ বিভিন্ন ফল গছের চাড়া রোপণ করা হয়।যা এই দিঘির সুন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুন।এই দিঘিতে সারা বছরে দেশি পাখির সমাগম থাকে, তবে  শীতের সময় এই দিঘিটি ভরে যায় হাজারও অতিথি পাখি দিয়ে। 

তাই শীতে পুরো দিঘিটি পরিনতি হয় পাখির রাজ্যে।সন্ধ্যা হওয়ার সাথে হাজার হাজার পাখি আশ্রয় নেয় দিঘির চতুর্পাশে লিচু গাছে ,আবার সকাল হলেই খাবার সন্ধানে দিঘিতে ভির জমায় তারা।চারিদিকে বিশাল সবুজের সমারোহ ও দিঘির টলটলে জলরাশি দেখে যে কেহ বিমহিত না হয়ে পারে না। 

বিশেষ করে পাখীদের খাবার সংগ্রহ ও গোসল এর দৃশ্য যে কারো মন কে আকৃষ্ট করে। তাই ঐতিহ্যবাহী এই দিঘিটি দেখতে দুরদুরান্ত থেকে ছুটে আসে দর্শনার্থীরা উপভোগ করেন এই দিঘির ছায়া ঘেরা অপরূপ সুন্দর্য।

শেষ কথা।


আজকে আপনাদের সামনে ঠাকুরগাঁও জেলার প্রাচীন কিছু দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।আজকের আর্টিকেলে উল্লেখ্যিত কোন স্থানটি আপনার পছন্দের কমেন্ট করে জানাবেন।আরো নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে নিয়মিত ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। এতক্ষন সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এস এম ট্রপিক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url