ভুঁই আমলা গাছের উপকারিতা।


ভুঁই আমলা নামটি হয়তো অনেকের কাছেই অজানা হতে পারে। কিন্তু ভুঁই আমলা গাছে রয়েছে অনেক গুলো ভেষজ ঔষধি গুনাগুন। আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো ভুঁই আমলা গাছের গুনাগুন বা উপকারিতা সম্পর্কে।
ভুঁই-আমলা-গাছের-উপকারিতা.webp


উপরের ছবি দেখে হয়তো অনেকেই বুঝে গেছেন আজকে আমরা কোন গাছের গুনাগুন নিয়ে জানবো।ভুই আমলা নামটি যদিও অনেকের কাছে অপরিচিত, কিন্তু ভুঁই আমলা গাছ আমাদের অনেকেরই পরিচিত। কেননা এই গাছটি রাস্তার ধারে বা বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত জমিতে হয়ে থাকে। চলুন এবার আমরা ভুঁই আমলা গাছ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

পোস্ট সূচিপত্রঃ

ভুঁই আমলা গাছ কোথায় পাওয়া যায়।

  • এশিয়া মহাদেশের অনেক দেশেই ভুঁই আমলা গাছ জন্মে। বিশেষ করে বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে রাস্তার ধারে,পরিত্যক্ত জমিতে সহ বিভিন্ন বন জঙ্গলে ভুঁই আমলা গাছ হয়ে থাকে। এই জন্য গ্রাম অঞ্চলের মানুষ নাম না জানলেও গাছটি দেখলে ঠিকি চিনতে পারে। অনেকের কাছে ভুমি আমলা নামেও পরিচিত এই গাছ।
  • ভুঁই আমলা গাছটি প্রায় দেড় থেকে দুই ফিট লম্বা হয় এবং শাখা-প্রশাখা উপরের দিকে উঠে।হালকা সবুজ রঙের হয় গাছটি, গাছের পাতা গুলো দেখতে অনেকটাই আমলকি গাছেত পাতার মত ঝিরিঝিরি।বর্ষাকালের শেষের দিকে পাতার নিচের দিকে ফ্যাকাসে সবুজ রঙের অনেক গুলো ফুল ফুটে।
  • এবং পরবর্তীতে লাল হয়ে যায়।ভুঁই আমলা গাছের পাতার নিচে ছোট ছোট সরষে দানার মত অনেক গুলো ফল হয় যা ছোট মসৃণ ক্যাপসুলের মত। ভুঁই আমলা গাছের পাতা থেকে শিকড় পর্যন্ত ঐষুধি গুনে ভরপুর।

ভুঁই আমলার ঐষুধি গুনাগুন।

বিভিন্ন রোগের ভেষজ ঐষুধ হিসেবে ভুঁই আমলা গাছের ব্যবহার হিয়ে আসছে প্রাচীন কাল থেকেই। যেমন জন্ডিস,বদহজম,শ্বাসকষ্ট, শরীরের দুর্বলতা, ম্যালেরিয়া, টিউমার, ক্ষত ঘা, চোখ ওঠা, হাড় ভাঙ্গা বা ব্যথা, চর্মরোগ, মূত্র থলিতে পাথর, আমশায়, জ্বর, সহ বিভিন্ন রোগের মহা ওষুধ ভুঁই আমলা। কোন রোগে ভুঁই আমলা কি ভাবে ব্যবহার করতে হয় তা নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

আরো পড়ুনঃ ঠাকুরগাঁও জেলার দর্শনীয় স্থান

ভুঁই আমলা খাওয়ার নিয়ম।

জন্ডিসঃ জন্ডিস রোগের জন্য ভুঁই আমলা বিশেষ কার্যকরী ওষুধ। ভুঁই আমলা গাছের শিকড় ভালো ভাবে পরিষ্কার করে বেটে রস করে ১০ মিঃ লিঃ রস এবং হালকা গরম ১ কাপ দুধের সাথে মিশিয়ে দিনে ২ বার ৮/১০ দিন খেলে জন্ডিস রোগ ভালো হয়ে যায়।
ভুঁই-আমলা-খাওয়ার-নিয়ম.webp
জ্বরঃ দীর্ঘ দিন জ্বর ভালো না হলে ভুঁই আমলা গাছের বিজ ও পাতার রস ১ গ্রাম করে দিনে ২ বার। এই ভাবে ৭ দিন খেলে জ্বর ভালো হয়ে যায়।

বদহজমঃ খাওয়ার পরে অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে হজম হয় না যেটা কে বদহজম বলা হয়। সে ক্ষেত্রে ভুঁই আমলা গাছের পাতার রস ২/৪ চা চামুচ দিনে ২ বার খেলে বদহজম দূর হয়ে যায়।

শরীরের দুর্বলতাঃ দুর্বল শরীরকে সবল করার জন্য ভুঁই আমলা গাছের পাতা ও শিকড় রস করে প্রতিদিন দুপুরে খাওয়ার পরে ২/৩ চা চামচ করে খেলে শরীরের দুর্বলতা কেটে যাবে।

শ্বাসকষ্টঃ যাদের দীর্ঘদিন থেকে শ্বাসকষ্ট ভালো হচ্ছে না তারা ভুঁই আমলা গাছের মুলের ৪ চা চামচ রস এবং ১ চামচ চিনি মিশিয়ে খেলে দ্রুত শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

কিরমিঃ প্রতিদিন খালি পেটে ভুঁই আমলা গাছের রস খেলে কিরমি মরে যায়।

মূত্র থলিতে পাথরঃ মূত্র থলিতে পাথর বা প্রসাব ক্লিয়ার না হলে আতপ চাল ৩ দিন ভিজিয়ে রাখে। চাউল ধোঁয়া পানির সাথে ভুঁই আমলা গাছের রস নিয়মিত খেলে মূত্র থলির পাথর রোগ ভালো হয়ে যায়।

দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়াঃ দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে বা মুখের ভিতরে কোন ঘা হলে। ভুঁই আমলা গাছের পাতা ভালো ভাবে পরিষ্কার করে মুখের ভিতর নিয়ে ভালো ভাবে চিবিয়ে কিছু সময় পরে ফেলে দিয়ে কুলি করে ফেলুন। খুব দ্রুত দাঁতের মাড়ির রোগ ভালো হয়ে যাবে।

আমাশয়ঃ দীর্ঘদিনের পুরাতন আমাশয় কোন ভাবেই দূর হচ্ছে না। তাহলে ভুঁই আমলা গাছের কচি পাতার রস হালকা গরম করে প্রতিদিন ১০ চামচ করে দিনে ২ বার খেলে রোগ ভালো হয়ে যায়।

ম্যালেরিয়াঃ ম্যালেরিয়া রোগের জন্য ভুঁই আমলা গাছের টাটকা পাতার রস নিয়মিত খেলে ম্যালেরিয়া রোগ ভালো হয়।বিশেষ করে শিশুদের জন্য ভালো কাজ করে।

সাদাস্রাব মহিলাদের অতিরিক্ত সাদাস্রাব গেলে ভুঁই আমলা গাছের রস নিয়মিত খেলে। সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

ভুঁই আমলা গাছের ব্যবহার বিধি।

দুর্গন্ধযুক্ত ক্ষত ঘাঃ শরীরের কোন যায়গায় ক্ষত ঘা দীর্ঘদিন থেকে ভালো হচ্ছে না। তাহলে আগে ক্ষত স্থান ভালো ভাবে গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করে। ভুঁই আমলা গাছের আঠা ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিন অল্প দিনেই ঘা ভালো হয়ে যাবে।

চোখ ওঠাঃ চোখ ওঠা বা চোখ দিয়ে পানি পড়া সহ চোখের যে কোন রোগের জন্য ভুঁই আমলা গাছের মূল লবণ দিয়ে তামার পাতে বাটে চোখে প্রলেপ দিলে দ্রুত সেরে যায়।

হাড় ভাঙ্গাঃ হাড় ভাঙ্গা বা শরীরে কোন যায়গায় আঘাত পেলে। ভুঁই আমলা গাছের পাতা রস করে লবণ দিয়ে মিশিয়ে প্রলেপ দিলে খুব দ্রুত ব্যাথা উপশম হয়।

বিষাক্ত পোকামাকড়ঃ বিষাক্ত কোন পোকা কামড় দিলে ভুঁই আমলা গাছের পাতা ও ফুল এক সাথে বেটে প্রলেপ দিলে দ্রুত যন্ত্রণা দূর হয় এবং ধীরে ধীরে বিষ মুক্ত হয়ে যায়।
ভুঁই-আমলা-গাছের-ব্যবহার-বিধি (2).webp

টিউমারঃ টিউমার হলে ভুঁই আমলা গাছের মূল বেটে টিউমারের ফুলা যায়গায় নিয়মিত প্রলেপ দিলে টিউমার ভালো হয়ে। বিশেষ করে মহিলাদের ব্রেস্ট টিউমার দীর্ঘদিন হয়ে গেলে ক্যান্সার এর আশংকা থাকে। ভুঁই আমলা গাছের ব্যবহারে ব্রেস্ট টিউমার দ্রুত ভালো হয়ে যায়।

চর্ম রোগঃ চার্ম রোগ সহ শরীরের বিভিন্ন ধরনের এলার্জি, চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে ভুঁই আমলা গাছ রস করে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর সময় প্রলেপ দিন। চর্ম রোগ ভালো হয়ে যাবে। তবে নিয়মিত প্রলেপ দিতে হবে।

কোনি ঘাঃ কোনি ঘা এমন একটি রোগ যা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। কিছু দিন পর পর ফাকে পুজ বের হয়। এই যন্ত্রণাদায়ক রোগ থেকে মুক্তি পেতে ভুঁই আমলা গাছের রস চাউল ধোঁয়া পানির সাথে মিশিয়ে ৩/৪ দিন প্রলেপ দিলে কোনি ঘা ভালো হয়ে যায়।

শেষ কথা

আজকে ভুঁই আমলা গাছের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানলাম। এবং কোন রোগের কি ভাবে ভুঁই আমলা গাছ ব্যবহার করতে হয় তা জানতে পারলাম।আমি আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের উপকারে আসছে। তাই আগামীতে স্বাস্থ্য বিষয়ক নতুন নতুন টিপস্ পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। সময় দিয়ে সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এস এম ট্রপিক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url