চাল কুমড়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
চাল কুমড়া খেলে কি উপকার হয় জানেন কি? অনেকের চাল কুমড়ার উপকার সম্পর্কে জানা
নেই। চাল কুমড়া ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম সহ স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্ত্বপূর্ণ
একটি সবজি। আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো চাল কুমড়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
চাল কুমড়া আমাদের পরিচিত একটি সবজি। বেশিরভাগ সময় এই সবজি ঘরের চালে হয় বলে এটি
চাল কুমড়া নামে পরিচিত। চাল কুমড়ায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে পুষ্টিগুন। চলুন এবার
আমরা চাল কুমড়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
পোস্ট সূচিপত্রঃ চাল কুমড়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
চাল কুমড়া সম্পর্কে কিছু তথ্য
- খুব বেশি যত্ন ছড়ায় যে সব সবজি জন্মায় তার মধ্যে অন্যতম একটি সবজির নাম চাল কুমড়া। চাল কুমড়া মুলত একটি শীতকালিন সবজি। তবে এখন প্রায় সারা বছর চাল কুমড়া পাওয়া যায়। ৯০ দশকের আগের মানুষ চাল কুমড়া গাছ বোপন করতো ঘরের আশেপাশে।
আরো পড়ুনঃ ঠাকুরগাঁও জেলার দর্শনীয় স্থান।
- এবং গাছ কিছুটা বড় হলে ধীরে ধীরে ঘরের চালে উঠায় দিত। আর ঘরের চালেই হত এই সবজি।তবে এখন আর শুধু চালে নয়, মাচা বা মাটিতেও চাল কুমড়ার চাষ করা হয়। চাল কুমড়ার কচি পাতা ও ডগা শাক হিসেবে খাওয়া যায়।
- চাল কুমড়া শুধু তরকারিই নয় বরং চাল কুমড়ার মোরব্বা,হালুয়া,পায়েস এবং বড়ি তৈরী করে সারা বছর রেখে খাওয়া যায়। শুধু মুখের স্বাদের জন্যই নয় বরং চাল কুমড়াতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও পুষ্টিগুন। চলুন তাহলে এখন চাল কুমড়ার গুনাগুন সম্পর্কে আলোচনা করি।
চাল কুমড়ার উপকারিতা
চাল কুমড়ার মধ্যে অনেক ধরনের উপকারিতা রয়েছে। এবং চাল কুমড়া বিভিন্ন পুষ্টিগুনে
গুণান্বিত। চাল কুমড়ায় রয়েছে- ভিটামিন সি, খাদ্য শক্তি, শর্করা, ফাইবার, আমিষ,
চর্বি, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, কোলেস্টেরল, লৌহ,
ফরফরাস, জিংক ইত্যাদি উপাদান। যে সকল উপাদান মানুষের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধি করে।চাল কুমড়া যক্ষ্মা, কোষ্টকাঠিন্য, গ্যাস্টিক, আলসার সহ বিভিন্ন
রোগের মহা ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
চাল কুমড়ার ঐষুধি গুনাগুণ
পাকা লাল বা হলুদ কুমড়ার থেকে চাল কুমড়ার মধ্যে ভেষজ ঐষুধি গুণ অনেক বেশি। আয়ুর্বেদিকদের মতে চাল কুমড়া বীর্যবর্ধক ও গরিষ্ঠ। রক্তের সমস্যা দূর করে। তবে কফের জন্য মাঝারি ধরনের চাল কুমড়া অনেক উপকারী। পাকা চাল কুমড়া শীতল নয়, তবে লবণ এবং সোডা মিশিয়ে সিদ্ধ করে খেলে পাকা চাল কুমড়া দ্রুত হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ক্ষুধা বৃদ্ধি করে।
- কোশট পরিষ্কার করে।হার্টের জন্য অনেক উপকারী চাল কুমড়া। চাল কুমড়া পিপাসা দুর করে।মানসিক প্রশান্তি নিয়ে আসে। মুত্রনালি পরিষ্কার করে। চাল কুমড়ার লতাপাতার মধ্যে রয়েছে শর্করা ও পাথরি নাশক গুণ।চাল কুমড়ার শাক খেলেও মুখের রুচি বাড়ে।
- চাল কুমড়া বিজের ভিতরের অংশ কোষ্টকাঠিন্য দূর করে। চাল কুমড়া পেটের ভিতরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে। চুল ও ত্বকের জন্য চাল কুমড়ার রস অনেক উপকারী। নিয়মিত চুল ও ত্বকে চাল কুমড়ার রস ব্যবহার করলে চুল ঝলমলে হয় এবং চেহেরা হয় উজ্জ্বল।
চাল কুমড়ার ঐষুধি ব্যবহার
চাল কুমড়া বিভিন্ন রোগের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ব্যবহার করতে হয়। কোন রোগের
জন্য কিভাবে ব্যবহার করবেন তা নিম্নে বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ্য হলোঃ-
যক্ষ্মারোগঃ যখন দেখবেন যক্ষ্মা রোগের প্রাথমিক লক্ষ্যণ গুলো দেখা
যাচ্ছে তখন প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে চাল কুমড়ার রস ৩/৪ চামচ অল্প একটু চিনি ও
দুধ মিশিয়ে দিনে ২ বার খেলে যক্ষ্মা রোগের জন্য ভালো কাজ করে। কোন কোন
চিকিৎসক মন্তব্য করেন যে যক্ষ্মা, অর্শ, সহ পেটের যে কোন রোগে চাল কুমড়া খেলে
উপকার হয়।
রক্তপিত্তঃ কাশি দেওয়ার সময় হঠাৎ গলা দিয়ে রক্ত বের হলে আমরা মনি
করি টিভি হইছে। আবার মলদার দিয়ে রক্ত পরলে মনে করি অর্শ হইছে মনে করা উচিৎ
নয়। বৈদ্যকের ভাষা অনুযায়ী এটি রক্তপিত্ত রোগের মধ্যে পড়ে। এই ধরনের
সমস্যার জন্য পাকা চাল কুমড়ার রস ৩/৪ চামচ মধু দিয়ে মিশিয়ে খেলে রক্ত পড়া
বন্ধ হয়। সাথে বসাক গাছের পাতার রস মিশিয়ে নিলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
শরীর পুষ্ট করনঃ পরিশ্রম বেশি হলে শরীরে কালন্তি ভাব আসে, এবং
শরীরের ক্ষয় ক্ষতিতে মাথা হালকা বোধ, কিছু মনে থাকে না। এই ধরনের সমস্যার
জন্য চাল কুমড়ার শাস শুকিয়ে চুর্ণ করে ২/৩ চামচ মধু মিশিয়ে শরীর পুষ্ট হয়।
এই চাল কুমড়ার বীজের শাস ঘি দিয়ে ভেজে চিনি দিয়ে নাড়ু বানিয়ে নিয়মিত খেলে
শরীরের এনার্জি বৃদ্ধি পায় এবং দুর্বলতা দূর হয়ে যা।
হৃদরোগঃ হৃদযন্ত্রের বৃদ্ধি হলে বা ঝুলে গেলে রোগীকে পাকা চাল
কুমড়ার হালুয়া বানিয়ে নিয়মিত খাওয়ালে উপকার হবে। হালুয়াতে গরুর দুধের থেকে
ছাগলের দুধ দিলে বেশি কার্যকরী হবে। এবং চাল কুমড়া ফুসফুসও ভালো রাখে।
কোষ্ঠকাঠিন্যঃ কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের জন্য চাল কুমড়ার রস নিয়মিত ৪/৫
চামচ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং প্রস্রাব দুটোই ক্লিয়ার করবে।
মৃগীরোগঃ মৃগীরোগের জন্য চাল কুমড়া খুব উপকারী। চাল কুমড়ার মোরব্বা
নিয়মিত খেলে মাথা ঘোরা,মাথা গরম হওয়া, এবং মৃগীরোগ সারে যায় এবং ঘুম ভালো
হয়।
ডায়াবেটিসঃ চাল কুমড়ার রস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকার। চাল
কুমড়ার মোরব্বা, হালুয়া খেলেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
জন্ডিসঃ জন্ডিসের জন্য চাল কুমড়া সব থেকে সস্তা ওষুধ। চাল কুমড়া
টকরো করে রোদে শুকিয়ে হুড়া করে খেলে বা চাল কুমড়ার তরকারি খেলে জন্ডিস
দ্রুত ভালো হয়ে যায়।
চাল কুমড়ার ক্ষতিকর দিক
প্রতিটি জিনিসের যেমন উপকার রয়েছে ঠিক তেমনি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা
ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। তেমনি ভাবে উপরে চাল কুমড়ার উপকার সম্পর্কে যেমন
আলোচনা করা হয়েছে। এখন আমরা জানবো চাল কুমড়ার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে। চাল
কুমড়া অতিরিক্ত হারে খাওয়া ঠিক নয়। কেনা চাল কুমড়ার মধ্যে রয়েছে
ক্যালোরি, কার্বোহাইড্রেট, এবং ফাইবার প্রচুর পরিমাণে।
এজন্য চাল কুমড়া অতিরিক্ত খেলে শরীরের ওজন বৃদ্ধি হতে পারে, এছাড়াও
ডায়াবেটিস এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। চাল
কুমড়া পুরোপুরি পাকা খাওয়া উত্তম। অপরিপক্ক বা পচা চাল কুমড়া খাওয়া
থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা অপরিপক্কবা পচা চাল কুমড়ার মধ্যে বিষাক্ত
উপাদান থাকতে পারে। আর এ ধরনের বিষাক্ত উপাদান খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া, বমি
সহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।
কিছু কিছু মানুষের চাল কুমড়ায় এলার্জি ও থাকতে পারে। যাদের এলার্জির জনিত
সমস্যা রয়েছে তারা চাল খাওার ফলে চুলকানি, শ্বাসকষ্ট, শরীরে ফোলা ফোলা
ভাব, সহ অন্যান্য এলার্জিজনিত লক্ষণ দেখা দিতে পারে।মহিলাদের জন্য
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত চালকুমড়া খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। আর যদি খেতেই
হয় তাহলে অবশ্যই গাইনি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপরে খাবেন।
চাল কুমড়ার মোরব্বা বানানোর পদ্ধতি
- একটা পরিপক্ব চাল কুমড়া নিতে হবে। চাল কুমড়ার ছাল ও বীজ ফেলে দিয়ে ভেতরের নরম অংশ নিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে নিতে হবে। এবং ভালো ভাবে সিদ্ধ করে নিতে হবে। সিদ্ধ হয়ে গেলে পানি ভালো ভাবে ঝারিয়ে ফেলুন। এবং শুকনো কাপড় দিয়ে ভালো ভাবে পানি মুছে নিন। যেন একটুও পানি না লেগে থাকে।
- চাল কুমড়া ওজনের ২ গুন চিনি অল্প পানি দিয়ে গরম করে চিনিটা সিরার মত বানিয়ে নিন। এর পরে চাল কুমড়ার টুকরো গুলো চিনির সিরাতে দিয়ে ফুটিয়ে নিন। ফুটন্ত চিনির শিরাতে অল্প করে এলাচিগুঁড়া দিয়ে কিছুক্ষণ পরে নামিয়ে নিন। ঠান্ডা হওয়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করুন ব্যাস হয়ে গেলো মোরব্বা। এর পরে কাচের বয়ামে করে রেখে দিন।
শেষ কথা
- আজকে আমরা জানতে পারলাম চাল কুমড়ার উপকারিতা, চাল কুমড়ার ঐষুধি গুনাগুন, এবং চাল কুমড়ার মোরব্বা বানানোর নিয়ম সহ আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আরো জানতে পেরেছি বিভিন্ন রোগে চাল কুমড়ার ব্যবহার।
- আমি আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। প্রতিনিয়ত এই ধরনের স্বাস্থ্য বিষয়ক নতুন নতুন টিপস্ পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। আর যদি আমাদের আর্টিকেল পরে আপনাদের উপকারে আসে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এতক্ষন সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
এস এম ট্রপিক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url