ঢেঁকি শাকের উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন
ঢেঁকি শাকের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? কি পুষ্টিগুণ রয়েছে এই ঢেঁকি
শাকে? চলুন জেনে নেই কি কি রোগের কাজ করে এই ঢেঁকি শাক। আরো জানবো হেলেঞ্চা শাকের
ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে।
শীতকাল আসলেই বাঙালির ঘরে শাকের কোন অভাব থাকে না। কেননা শীতের সময় বিভিন্ন
ধরনের শাক জন্মায়। যেমন- পুঁইশাক, পালং শাক, সরিষা শাক, লাল শাক, বাবু শাক
ইত্যাদি। এ সমস্ত শাকের তালিকার মধ্যে অন্যতম পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি শাকের নাম
হলো ঢেঁকি শাক। চলুন আজকের আর্টিকেলে ঢেঁকি শাক সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
পোস্ট সূচিপত্রঃ ঢেঁকি শাকের উপকারিতা ও ঐষধি গুনাগুন
ঢেঁকি শাক সম্পর্কে কিছু তথ্য
বাঙালিরা সচরাচর শাক খেতে একটু বেশিই পছন্দ করে। আর প্রতিটি সবুজ শাকে রয়েছে
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষ শাক খেতে বেশ অভ্যস্ত। তাই
গ্রাম অঞ্চলের মানুষ প্রায় সব ধরনের চাষাবাদ করে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে এমন একটি
শাক পাওয়া যায়। যে শাকটি পুষ্টি গুনে ভরপুর। এবং বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবেও
কাজ করে। সে শাকের নাম হল ঢেঁকি শাক।
এই ঢেঁকি শাক যদিও শহর অঞ্চলের মানুষ একটু কম চিন। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে এটা
এভেলেবেল পাওয়া যায়।সব থেকে মজার বিষয় হলো অন্যান্য শাকের মতো ঢেঁকি শাক
চাষাবাদ করতে হয় না। ঢেকি শাক গ্রাম অঞ্চলের রাস্তার ধারে, বনজঙ্গলে, পরিত্যক্ত
জমিতে। মোটকথা গ্রামাঞ্চলের যেখানেই কিছু আগাছা জন্মায় তার আশপাশেই আগাছার সাথে
এই ঢেঁকি শাক দেখা যায়।
আরো পড়ুনঃ কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে
শহরের বাজার গুলিতে দেখা যায় ছোট ছোট আঁঠি বেঁধে ঢেঁকি শাক বিক্রি করা হয়। অনেক
কম দামে এই ঢেঁকি শাক পাওয়া যায়। দাম যদিও কম কিন্তু এর পুষ্টিকর অনেক বেশি।
তাই গ্রাম অঞ্চলের মানুষ প্রায় এই শাক খেয়ে থাকেন। ঢেঁকি শাকের অনেক উপকার
রয়েছে। বিশেষ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ঢেঁকি শাক অনেক
উপকারী। বিভিন্ন এলাকায় ঢেঁকি শাক আবার বৌ শাক নামেও পরিচিত।
ঢেঁকি শাকের উপকারিতা
শাকের মধ্যে পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি শাকের নাম হল ঢেঁকি শাক। স্বাভাবিকভাবেই সমস্ত
শাকের মধ্যে রয়েছে পুষ্টিগুণ। যে মানব দেহের অত্যন্ত কার্যকরী উপাদান। বিশেষ করে
প্রতিটি সবুজ শাকে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন। যা মানব দেহের বিভিন্ন রোগ
প্রতিরোধ কর। সে সমস্ত শাকের মধ্যে ঢেঁকি শাক অন্যতম। ঢেঁকি শাক খাওয়ার সময়
যদিও একটু তিতা লাগে।
কিন্তু অনেকের কাছে আবার এটা অনেক সুস্বাদু। গ্রামাঞ্চলের কিছু মানুষ তো এমন
রয়েছে যারা নিয়মিত ঢেঁকি শাক খেয়ে থাকেন। আর নিয়মিত ঢেঁকি শাক খাওয়ার কারণে
তাদের শরীরে তেমন কোন রোগ দেখা যায় না। থাইল্যান্ডে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই ঢেঁকি
শাক। সত্যিই অসাধারণ গুণে ভরপুর ঢেঁকি শাক। দেখি শাক শুধু ভিটামিনই নয়। বিভিন্ন
রোগের কাজ করে থাকে।
বিশেষ করে লিভার ইনফেকশন, ঠান্ডা জনিত কাশ সর্দি এই সমস্ত রোগের মহা
কার্যকরী ঔষধ ঢেঁকি শাক। ঢেকি শাক অনেক প্রজাতির রয়েছে। মেয়ে প্রজাতির ঢেঁকি
শাকের মূল থেকে একটি ওষুধ তৈরি করা হয় যা মহিলারা সন্তান প্রসবের সময় স্তনের
মধ্যে ব্যথা হলে এস অত্যন্ত কার্যকরী হয়। ঢেঁকি শাক জন্ডিস এর মহা ওষুধ হিসেবে
ঘোষণা করা হয়েছে।
ঢেঁকি শাকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায় এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঢেঁকি শাক অত্যন্ত উপকারী একটি খাদ্য হতে পারে। ঢেঁকি
শাক ফুসফুসের ক্যান্সার ত্বকের ক্যান্সার ও গর্ভ ক্যান্সারের বিশেষ ঔষধ হিসেবে
কাজ করে। এছাড়াও ঢেঁকি শাকের উপকারিতা আরো অনেক রয়েছে।
ঢেঁকি শাকের ঔষধি গুনাগুন
ঢেঁকি শাকের মধ্যে যে সমস্ত ঔষধি গুনাগুন রয়েছে তা মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত
প্রয়োজনীয়। যা মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য কর।
ঢেঁকি শাকে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম,
ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালোরি, সোডিয়াম, জিংক, সহ আরো অনেক পুষ্টি পরাণ রয়েছে।
নিম্নে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ-
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
ঢেঁকি শাকে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
করতে সহায়তা করে। বিভিন্ন ধরনের ছোয়াচে ঠান্ডা কাশির সমস্যা কমাতে এবং যেকোনো
ধরনের প্রদাহ কমাতে দেখিস অত্যন্ত কার্যকরী। থাকা পটাশিয়াম হৃদরোগের সমস্যা
নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এবং বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি থেকে দেখা করে ঢেঁকি শাক।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
ঢেঁকি শাকের হয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। আর ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার পেটের খাদ্য
পচনের গতি কমিয়ে দেয়। তাই পেট ভরা থাকে অনেকক্ষণ। তাই ক্ষিদা লাগে অনেক কম।
ঢেঁকি শাক ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় ওজন কমাতে সাহায্য করে। এবং ত্বকে দেয় না
বয়সের ছাপ পরতে দেয় না। এবং স্বাদ খাওয়ার মাধ্যমে যৌবন ধরে রাখা যায় দীর্ঘদিন।
দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে
ঢেঁকি শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, আর ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার আমাদের
চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সহায়তা করে। তাই আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো
রাখার জন্য নিয়মিত খাওয়ার তালিকায় ঢেঁকি শাক রাখা যেতে পারে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে
ঢেঁকি শাক ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটি খাদ্য হতে পারে। কেননা
ঢেঁকি শাকে গ্লাইসেম অনেক কম থাকে। এবং প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে তাই ঢেঁকি শাক
খেলে রক্তের শর্করার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দেয়। যার কারনে ব্লাড
সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে অন্যতম ভূমিকা পালন করে ঢেঁকি শাক।
ঢেঁকি শাক খাওয়ার ক্ষতিকর দিক
প্রতিটি জিনিসের কিছু না কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে রয়েছে। প্রতিটা
জিনিসের যেমন ভালো দিক রয়েছে তেমন খারাপ দিকও আছে। বিশেষ করে প্রাকৃতিক কোনো
উপাদান খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে খেতে হবে। যদি
যাচাই-বাছাই করে না খেয়ে থাকি তাহলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ
লাভের থেকে ক্ষতি বেশি হয়ে যায়। ঠিক তেমনি ঢেঁকি শাক খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই
কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
ঢেঁকি শাক অবশ্যই ভালোভাবে রান্না করে খেতে হবে। এছাড়াও ঢেঁকি শাক আগে ভালোভাবে
চিনতে হবে। কেননা ঢেঁকি শাকের অনেকগুলি জাত রয়েছে। ঢেঁকি শাকের মধ্যে এমন কিছু
প্রজাতি রয়েছে যেগুলো বিষাক্ত। পুরুষ প্রজাতির উদ্ভিদ থেকে অধিকাংশ গ্রহণ করার
ফলে পেশি দুর্বলতা এবং চোখের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এবং কি মানুষ কোমাতেও চলে
যেতে পারে। তাই অবশ্যই ঢেঁকি শাক খাওয়ার পূর্বে কোন প্রজাতির খাওয়া যাবে সেই
বিষয়টা ভালোভাবে জানতে হবে ।
হেলেঞ্চা শাকের ঔষধি গুনাগুন
হেলেঞ্চা শাক নামটি শোনার পরে হয়তো অনেকের কাছে অপরিচিত হতে পারে। কিন্তু এই শাক
দেখলে সকলেই চিনবে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষের সাথে খুব ভালো পরিচিত রয়েছে এ
শাকের। কিন্তু এটি যে খাওয়ার উপযোগী বা এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি এটা অনেকেই
জানেনা। হেলেঞ্চা শাক্তি মূলত ঢেঁকি শাকের মতোই ছাড়াই হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন পুকুর নদী নালা খাল বিল সহ বিভিন্ন জলাশয়ে এ হেলেঞ্চা শাক
হয়ে থাকে। কলমি শাকের মতো হেলেঞ্চাশা কো পানির উপরে ভাসতে থাকে। হেলেঞ্চা শাক
পুকুরে থাকে সে পুকুরের পানি স্বচ্ছ থাকে। এবং হেলেঞ্চা শাকের গাছের কান্ড থেকে
এক ধরনের আঁশ বের হয় যেটি মাছের খুব পছন্দনীয় খাবার।
হেলেঞ্চা শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে।এবং বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ
করে। হেলেঞ্চা শাক নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, হাঁপানি, হাত পা জ্বালা পোড়া করা,
ঘামাচি, বাতের ব্যথা, স্নায়ুরোগের নিরাময় করে। আগে রয়েছে এন্টি এক্সিডেন্ট,
জীবননাশক, ডায়রিয়া, ব্যথা নাশক, ইত্যাদি রোগের কার্যকরী হিসেবে কাজ করে।
আয়ুর্বেদিকের মতে হেলেঞ্চা শাক উচ্চ রক্তচাপ, ক্ষুধাবর্ধ, এবং যেকোনো ধরনের
জীবাণু ও অতিরিক্ত জ্বর উপশম করতে সাহায্য করে।হেলেঞ্চা শাক নিয়মিত খেলে রক্তের
হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি পায়। যারা দীর্ঘদিন জ্বরে ভুগছেন। মুখে কোন রুচি নেই কোন
কিছু খেতে ভালো লাগে না। তারা হেলেঞ্চা শাক আর মাছ একসাথে ঝোল করে রান্না করে
খেলে মুখের রুচে ফিরে আসবে। এবংক্ষুধা বাড়বে। চর্মরোগ ও ঘামাচির জন্য হেলেঞ্চা
শাক অত্যন্ত উপকারী।
চর্ম রোগীদের জন্য প্রতিদিন সকালে হেলেঞ্চা শাক রস করে খেলে চর্মরোগ ভালো হয়ে
যায়। হেলেঞ্চা শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা ক্যান্সার রোগ
প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। অতিরিক্ত মাথাব্যথা হলে বা মাথা যন্ত্রণা করলে
হেলেঞ্চা শাক ভালোভাবে বেটা মাথায় প্রলেপ দিলে মাথাব্যাথার যন্ত্রণা উপশম হয়।
ব্লাড সুগার কমানোর জন্য হেলেঞ্চা শাক নিয়মিত খেতে পারেন।
শেষ কথা
আজকে আর্টিকেলে আমরা জানতে পেরেছি ঢেঁকি শাক খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা
সম্পর্কে। আরো জানতে পেরেছি হেলেঞ্চা শাকের ওষুধি গুনাগুন সম্পর্কে। তবে ঢেঁকি
শাক খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই সচেতন ভাবে খাওয়ার উপযোগী ঢেঁকি শাক সংগ্রহ করে
খাবেন। অন্যথায় বড় ধরনের ঝুকিতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছ।
আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনারা যদি উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট
ভিজিট করুন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন স্বাস্থ্য সচেতন মূলক আর্টিকেল পেতে। আর আমাদের
আর্টিকেল পড়ে ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। সময় নিয়ে পাশে থাকার জন্য
অসংখ্য ধন্যবাদ।
এস এম ট্রপিক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url