দন্ডকলস/শ্বেতদ্রোণ গাছের উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন
দন্ডকলস গাছের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? দন্ড কলস গাছে রয়েছে বিভিন্ন
রোগের ঔষধি গুনাগুন। তাহলে চলুন আজকের আর্টিকেল থেকে জেনে নিই দন্ড কলেজ গাছের
উপকারিতা সম্পর্কে। আরো জানবো শ্বেতদ্রোণ গাছের ব্যবহার বিধি সম্পর্কে।
গ্রাম অঞ্চলের মানুষের কাছে যদিও দন্ড কলস থাক হিসেবে পরিচিত। তবে অনেকেই দন্ড
কলস গাছের উপকারিতা বা ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে জানেনা। দন্ড কলস গাছে কি পরিমাণে
ঔষধি গুনাগুন রয়েছে তা আজকের আর্টিকেল থেকে বিস্তারিত জেনে নেই।
পোস্ট সূচিপত্রঃ দন্ডকলস/শ্বেতদ্রোণ গাছের উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন
দন্ড কলস গাছ সম্পর্কে কিছু তথ্য
দন্ড কলস গাছ শহরের মানুষের চেয়ে গ্রামের মানুষের কাছে বেশি পরিচিত। কেননা এই
গাছটি গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন জায়গায় জন্মায়। দন্ড কলাস গাছ গ্রাম অঞ্চলের মানুষ
শাক হিসেবে খেয়ে থাকে। এছাড়াও গ্রামাঞ্চলে আগেকার মানুষগুলো বিভিন্ন রোগ থেকে
আরোগ্য লাভ করার জন্য দন্ড কলস গাছের ব্যবহার করত। দন্ড কলস গাছ গ্রামাঞ্চলের
পরিত্যক্ত জমিতে বা রাস্তার ধারে এবং বিভিন্ন রবি শস্য ফসলের জমিতে ফসলের সাথে
জন্মায়।
তবে দন্ড কলস গাছ বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন- শ্বেতদ্রোণ, দুলফি,
দল কলস, কানশিসা, হালকুসা, ধুবরি শাক, দোর কলস ইত্যাদি নামে পরিচিত। দন্ড কলস
গাছের পাতা গারো সবুজ কালারের হয়। এবং কান্ড হালকা সবুজ রঙ। সাদা রঙের ছোট ছোট
ফুল ফোটে এবং এ ফুল থেকে ফল হয়। ফলের ভিতরে ছোট ছোট দানার মত বীজ থাকে। দন্ড কলস
গাছ কমবেশি সারা বছরই পাওয়া যায়।
তবে বর্ষার শেষের দিকে এটি প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। দন্ড কলস গাছ অল্প কিছু
সংখ্যা মানুষ থাক হিসেবে খেয়ে থাকেন। তাছাড়া অধিকাংশ মানুষের কাছেই এটি আগাছা
হিসেবে পরিচিত। দন্ড কলস গাছের উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেরই অজানা। তাইতো বেশিরভাগ
মানুষের কাছেই আগাছা হিসেবে পরিচিত এই গাছ। দন্ড কলস গাছের উপকারিতা সম্পর্কে যদি
সঠিক তথ্য কেউ জানে।
তাহলে এই গাছ আর কখনো আগাছা হয়ে থাকবে না মানুষ যত্ন সহকারে এই গাছ হেফাজত করবে।
কেননা দন্ড কলস গাছের মধ্যে বিভিন্ন রোগের ঔষধি গুনাগুন এবং বিভিন্ন পুষ্টিগুণ
উপাদান রয়েছে। বিশেষ করে সর্দি কাশি এবং শরীরের বাত ব্যথার জন্য অত্যন্ত
কার্যকরী ভূমিকা পালন করে এই দন্ড কলস গাছ। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় ও
বিচ্ছু কামড় দিলে দন্ড কলস গাছ ব্যবহার করা হতো। চলুন দন্ড কলস গাছের উপকারিতা
সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেই।
দন্ড কলস গাছের উপকারিতা
গ্রাম অঞ্চলে এমন কিছু গাছ রয়েছে যে সমস্ত গাছগুলো বেশিরভাগ মানুষ আগাছা বা
জঙ্গল হিসেবে। কিন্তু ওই সমস্ত জঙ্গল বা আগাছা মনে করা গাছের মধ্যে রয়েছে হাজারো
রোগের মহা ঔষধি গুনাগুন। ভেষজ উদ্ভিদ গবেষকদের মতে গাছের মধ্যে থাকা ওষুধে
গুনাগুন ব্যতীত কোন ধরনের ঔষধ তৈরি করা সম্ভব না। কেননা প্রতিটি গাছের মধ্যেই এমন
কিছু ঔষধি গুনাগুন রয়েছে যা মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন
করে।
আর মানুষ এই সমস্ত গাছের গুনাগুন না জানার কারণে এগুলোকে আগাছা মনে করে কেটে ফেলে
অথবা নষ্ট করে ফেলে। ঠিক এমনই একটি অবহেলিত উদ্ভিদের নাম দন্ড কলস গাছ। যে গাছের
মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রোগের ঔষধি গুনাগুন। যে গাছ সেবনের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ
থেকে নিরাময় পাওয়া যায়। দণ্ড কলস গাছের উপকারিতা সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত
আলোচনা করা হলোঃ-
- জ্বর সর্দি দূর করতে সাহায্য করে।
- শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা দূর করে।
- কান ব্যথা বা কান দিয়ে পানি পড়া দূর করে।
- পুরনো কাশি দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর।
- বাতের ব্যথার কারণে হাত পা ফুলে যাওয়া দূর করে।
- ছোট বাচ্চাদের সত্যি দূর করতে সহায়তা করে।
- বাচ্চাদের পেটের কৃমি দূর করেন।
- ছোট বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা পাষা দূর করে।
- শরীরের চুলকানি চিরতরে বিদায় করে।
- গবাদিপশুর পীরা বা মুত্র রোগ দূর করে।
- বদহজম বা পেটফাপা দূর করে।
- মেয়েদের ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত রক্ষপাত কমায়।
দন্ড কলস গাছের পুষ্টিগুণ উপাদান সমূহ
মানব দেহের বিভিন্ন ঘাটতি পূরণের জন্য বিভিন্ন রকমের ভিটামিন বা পুষ্টিগুণ
উপাদানের প্রয়োজন। শরীরকে সুস্থ ও স্ববল রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ
যুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এই সমস্ত ভিটামিন এর ঘাটতি পূরণ করতে প্রাকৃতিক এবং
ঘরোয়া ভাবে দন্ড কলস গাছের ব্যবহার করে ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করা যায়। কেননা
দণ্ড কলস গাছের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও পুষ্টিগুন উপাদান। দন্ড
কলস গাছের মধ্যে কি পরিমানে উপাদান রয়েছে আলোচনা করা হলোঃ-
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
এনার্জি | ১৬ কিলোগ্রাম |
শর্করা | ৩.৪ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.১ গ্রাম |
প্রোটিন | ১.৩ গ্রাম |
ফলেট | ১২ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন-বি-১ | ০.০৪৭ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন-বি-২ | ০.১১২ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন-বি-৩ | ০.৪৮০ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন-বি ৬ | ০.০৭৩ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন- সি | ২১ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | ৪৫ মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | ৪৯৪ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৪৫ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ৪৪ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ৬৫ মিলি গ্রাম |
লৌহ | ১.৯৯ মিলিগ্রাম |
জিংক | ০.১৭ মিলিগ্রাম |
সেলেনিয়াম | ০.০৯ মাইক্রোগ্রাম |
তামা | ০.০১৩ মিলিগ্রাম |
ম্যাংগানিজ | ০.৩০৩ মিলিগ্রাম |
কোন রোগের জন্য কিভাবে খাবেন দন্ড কলস গাছ
যেকোনো রোগ থেকে মুক্তির জন্য ভেষজ উদ্ভিদ ব্যবহার করলে অবশ্যই তার নিয়ম কানুন
সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। কেননা প্রতিটি জিনিসের পার্শপ্রতিক্রিয়া
থাকে। অতএব ঘরোয়া কোন উপায়ে শরীরের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তির জন্য সমাধান পেতে
হলে অবশ্যই নিয়ম-কানুন ভালোভাবে জেনে নিবেন। আর যদি নিয়ম না জেনে ব্যবহার বা
খাওয়া হয় তাহলে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তখন দেখা যাবে যে যতটুকু সমস্যা ছিল তার থেকে আরো অনেক বেশি সমস্যা হয়ে গিয়েছে।
তাই সব থেকে উত্তম পন্থা হলো ঘরোয়া উপায়ে কোন চিকিৎসা করতে গেলে অবশ্যই অভিজ্ঞ
ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপরে ব্যবহার করা উচিত। কাছ থেকে উপকার পাওয়ার জন্য
নিম্নে খাওয়ার কিছু নিয়মাবলী তুলে ধরা হলোঃ-
জ্বর সর্দিঃ দীর্ঘদিন থেকে জোরে ভুগে থাকলে দণ্ড কলস গাছের পাতা সিদ্ধ করে
পানি ফেলে দিন এবং রসুন ও কালোজিরা ভালোভাবে ভিজে নিয়ে মরিচ দিয়ে বেটে আক্রান্ত
ব্যক্তিকে খাওয়াল দ্রুত জ্বর ভালো হয়ে যায়।
শরীরের ব্যথাঃ বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা অনুভব করলে হাত পা ভিতর থেকে চাবালে
দন্ড কলস এর পাতা সহ নিমপাতা ও নিশিন্দা পাতা এক জায়গায় করে ভালোভাবে ব্লেন্ডার
করে নিন। এবং সাথে হলুদ মিশে বড়ি তৈরি করুন এবং ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। এভরি
প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যা একটা করে সেটা বিভিন্ন ব্যাথা দূর হয়ে যায়।
কানের ব্যথাঃ কানের ভিতরে ব্যথা হলে বা কানের ভেতর থেকে কোচ অথবা পানি পড়
বের হলে দণ্ডকলস গাছের পাঁচ থেকে সাতটি পাতা পরিষ্কার করে বেটা রস তৈরি করে এক
থেকে দুই ফোঁটা করে কানের ভিতরে দিলে অত্যন্ত কার্যকরি ভূমিকা পালন করে।
কাশিঃ যারা দীর্ঘদিন থেকে কাশে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খেয়েও
কোন ফলাফল পাচ্ছেন না তাদের জন্য সুখবর। কেননা দন্ড কলস গাছের পাতা শিকড় আদা সহ
পেটে রস করে রস ভালোভাবে ছাকে নিন। এরপরে কালকে একটু গরম করে নিয়মিত খেলে কাশি
দূর হয়ে যায়।
বাচ্চাদের সর্দিঃ ছোট বাচ্চাদের অল্পতেই ঠান্ডা লেগে যায় এবং প্রায় সময়
সর্দি লেগে থাকে। বাচ্চাদের সর্দি দূর করার জন্য দন্ড কলস গাছের পাতা রস করে
মায়ের বুকের দুধের সাথে মিশিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াল সর্দি দূর হয়ে যায়।
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানাঃ ছোট বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা আমরা দেখা
দিলে দন্ড কলস গাছের পাতা রস করে হালকা মধু মিশিয়ে বাচ্চাদের খাওয়াল পাতলা
পায়খানা ও আমাশয় দূর হয়ে যায়।
কৃমিঃ কৃমি এইসব মানুষেরই হয়ে থাকে তবে বাচ্চাদের একটু বেশি হয়ে থাকে।
কেননা বাচ্চারা বেশিরভাগ সময় চকলেট খেতে পছন্দ করে আর এ সমস্ত খাবারের কারণে
পেটে কৃমি হয়। বেকের মেয়ে দূর করার জন্য দন্ড কলস গাছের পাতা রস করে এক চামচ
সমপরিমাণ রস নিয়মিত চার থেকে পাঁচ দিন খেলে পেটের কৃমি মরে যায়।
ঋতুস্রাবঃ মেয়েদের একটু সাবের সময় বিভিন্ন কারণে অনেক সময় অতিরিক্ত
রক্তপাত হয় এবং পেট ব্যথা দন্ড কলস গাছের পাতা রস করে খেলে ঋতুস্রাবের সময়
অতিরিক্ত রক্ত যাওয়া বন্ধ করে।
পেট ফাঁপা ও বদহজমঃ দন্ড কলস গাছের পাতা ও শিকড় ভালোভাবে বেটে রস করে
নিয়মিত খেলে পেট ফাঁপা ও বদ হজম দূর করে।
দন্ড কলস গাছের ব্যবহারবিধি
গন্ডগোলের গাছের মধ্যে হয়েছে বিভিন্ন রোগের ঔষধি গুনাগুন তাই ব্যবহার করে
বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞগণ দন্ড কলস গাছের
মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন।
সেই নিয়ম অনুযায়ী দন্ড কলস গাছের রস ব্যবহার করলে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি
পাওয়া যাবে। চলুন জেনে নেই কোন রোগের জন্য কিভাবে দন্ড কলস গাছ ব্যবহার করতে
হয়।
বাতের ব্যথাঃ আমার দাঁতের ব্যথার কারণে মানুষের হাত ও পা ফুলে যায় এই
ধরনের সমস্যার সমাধান করার জন্য বন্ধ কলস গাছের পাতা রস করে হালকা লবণ দিয়ে
মালিশ করলে হাত ও পা ফোলা কমে যায়।
বাচ্চাদের সর্দিঃ বাচ্চাদের সর্দি দূর করতে দন্ড কলস গাছের পাতার রস করে
মায়ের বুকের দুধের সাথে মিশিয়ে মাথার তালুতে ভালোভাবে দিয়ে রাখলে বাচ্চার
সর্দি কবে যায়।
চুলকানিঃ চুলকানি একটি অসহ্যকর ব্যাধি। কেননা একবার চুলকানি শুরু করলে আর
চুলকানি থামেনা। চুলকানি দূর করার জন্য দন্ড কলস গাছের রসের সাথে হলুদের রস এবং
খাঁটি নারিকেল তেল মিশিয়ে শরীরে ভালোভাবে মেখে রোদে শুকিয়ে দিন। এরপরে গোসল করে
নিলে চুলকানির জন্য ভালো উপকার পাওয়া যায়।
হাত বা পা মচকে গেলেঃ হাত পা অথবা শরীরে কোন অঙ্গ মচকে গেলে দন্ড কলস
গাছের পাতা রস করে এক ফোটা কেরোসিন তেল মিশিয়ে হাফ চিমটি লবণ দিয়ে মক্কা
জায়গায় মালিশ করলে মচকানো স্থান দ্রুত ভালো হয়ে যায়।
লেখকের শেষ কথা
দন্ড কলস গাছের উপকারিতা সম্পর্কে আজকে আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা আজকে
আর্টিকেল থেকে আরো জানতে পেরেছি দন্ড কলস গাছের ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে। তবে
উপরোক্ত বর্ণিত উপাদান গুলো কোন চিকিৎসা নয়। তবে সঠিক নিয়মে ব্যবহার করতে পারলে
উপকার পাওয়া যাবে। কোন রোগের চিকিৎসার জন্য অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার
জন্য বলা হলো।
আজকে আর্টিকেল পড়ে যদি আপনার উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত
ভিজিট করুন। কেননা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত নতুন নতুন বিষয়ে আর্টিকেল লেখা
হয়। আমাদের আর্টিকেল পড়ে উপকৃত হয়ে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন
না। সময় নিয়ে সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
এস এম ট্রপিক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url