এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার ও নিম পাতার ঔষধি গুনাগুন

এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? নিম পাতা ব্যবহার করে এলার্জিকে জানান চির বিদায়। চলুন আজকে রাতে গেলে এলার্জি ট্রেন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই। আরো জানবো নিম পাতা ব্যবহার করে মুখের ব্রণ দূর করার উপায় দূর করার উপায় সম্পর্কে।
এলার্জিতে-নিম-পাতার-ব্যবহার-ও-নিম-পাতার-ঔষধি-গুনাগুন .webp
নিম পাতায় রয়েছে হাজারও ঔষধি গুনাগুন। তাই নিম পাতা ব্যবহার করে এলার্জি দূর করার পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় নিম পাতা ব্যবহার করে। চলুন আজকের আর্টিকেল থেকে নিমপাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

পোস্ট সূচিপত্রঃ এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার ও নিম পাতার ঔষধি গুনাগুন

নিম পাতার উপকারিতা

নিম গাছ এমন একটি ঔষধি গুনাগুন সম্পন্ন। যার শিকড় থেকে নিয়ে শুরু করে পাতা, ফল, ফুল, সমস্ত কিছু ওষুধি গুনাগুনে ভরপুর। মোটকথা নিম গাছের এমন কোন অংশ নাই যেটা মানুষের উপকারে আসে না। নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞগন বলেছেন। মানবদেহের এমন কোন রোগ নেই নিম পাতা যার উপকারে আসে না।

শরীরের প্রতিটি রোগের জন্যই নিমপাতা অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। নিম পাতা ব্যবহারের ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পেটের যেকোনো ধরনের সমস্যায় নিমপাতা অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। নিম পাতা ব্যবহারে পালসার এর মতো কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। শরীর চর্মরোগ জাতীয় যত সমস্যা রয়েছে।

নিম পাতার ব্যবহারে নিমিষেই দূর হয়ে যায়। চুলকানি থেকে নিয়ে শুরু করে এলার্জি চুলকানি মুখের ব্রণ সহ। সমস্ত রোগের মহা ঔষধ নিম পাতা। বিশেষজ্ঞগন বলেছেন কোন ব্যক্তি বাড়ির সাথে নিমের গাছ থাকলে পরিবারের মানুষের রোগ কম হয়। নিম গাছের প্রবাহিত বাতাস মানুষের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি দেয়। শুধু এতোটুকুই নয় নিম গাছের কাঠ দিয়ে বানানো খাটের মধ্যে ঘুমালে।

ওই মানুষের এত সহজে বড় ধরনের জটিল কঠিন কোন রোগ হয় না। তার মানে বুঝতেই পারছেন নিম পাতায় কি পরিমাণে উপকার রয়েছে। অতএব আমাদের উচিত প্রত্যেকেরই বাড়িতে কমপক্ষে একটি করে হলেও নিম গাছ গোপন করা। কেননা বাড়িতে নিমগাছ থাকলে শরীর বিভিন্ন রোগ থেকে নিরাপদ থাকবে।

এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার

এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার ম্যাজিকের মত কাজ করে। বর্তমানে এলার্জি রোগে আক্রান্ত। এলার্জির কারণে বিভিন্ন সময় আমাদের অস্বস্তিতে ভুগতে হয়। এলার্জি সমস্যার কারণে শুধু চুলকানি নয় বরং এলার্জির কারণে হাঁচি, কাশি, হাঁপানি, এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এলার্জি কতটা অস্বস্তিকর তাই একমাত্র তারাই বুঝে যারা এলার্জি রোগে আক্রান্ত। যাদের অ্যালার্জি রয়েছে তারা চাইলেও অনেক সময় নিজের পছন্দের খাবার গুলি খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেনা।

কেননা এরকম অনেক খাবার রয়েছে যেগুলি খেলে এলার্জির মাত্রা বেড়ে যায়। যেমন- গরুর মাংস, হাঁসের মাংস, হাঁসের ডিম, গরুর দুধ, ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, পুটি মাছ, বোয়াল মাছ, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া সহ আরো অনেক খাবার রয়েছে যেগুলি খেলে এলার্জির মাত্রা বেড়ে যায়। যার কারণে এলার্জি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিগণ ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও এই সমস্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হয়।

শুধু খাবারে নয় বরং ধুলাবালি বা বিভিন্ন ফুলের ঘ্রাণেও এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর এই এলার্জি দূর করার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের ঔষধ সেবন করে থাকি। দেখা যায় এরপরেও আমাদের কোন উপকার হয় না। আয়ুর্বেদিক দের মতে নিম পাতা ব্যবহারে এলার্জি থেকে নির্মূল ভাবে মুক্তি পাওয়া যায়। কেননা নিম পাতার মধ্যে থাকা আ্যন্টি-ব্যাক্টেরিয়াল, আ্যন্টি-ইনফ্লামেটরি এবং অ্যন্টি-হিস্টামিন উপাদান।

যা এলার্জির বিরুদ্ধে লড়াই করে। তাই আমরা এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার করতে পারি। এলার্জিতে নিম পাতা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। যেমন- সরাসরি কাঁচা নিমপাতা চিবিয়ে খেলে শরীরের রক্ত বিশুদ্ধ এবং শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নিমপাতা বেটে শরীরে লাগালে এলার্জির জনিত সমস্যা দূর হয়। এছাড়াও নিমপাতা দিয়ে এলার্জি দূর করার আরো কিছু পদ্ধতি রয়েছে যা নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

এলার্জিতে নিম পাতা ব্যবহারের পদ্ধতি ও খাওয়ার নিয়ম

ভেষজ যে কোন উদ্ভিদ বা ঘরোয়া কোন উপাদান থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য অবশ্যই ব্যবহারের পূর্বে আপনাকে তার ব্যবহার বিধি এবং পরিমান সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা থাকতে হবে। তা না হলে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ঠিক তেমনি ভাবে নিম পাতা ব্যবহার করে এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যও আপনাকে আগে ব্যবহারবিধি ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। এলার্জিতে নিম পাতা ব্যবহারের কিছু পদ্ধতি এবং খাওয়ার নিয়ম নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ-

  • ১ কেজি সপরিমাণ কাচাঁ নিমপাতা ভালোভাবে পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে নিন। এরপরে শুকনো নিমপাতা ব্লেন্ডারে অথবা সিল-পাটাতে ভালোভাবে গুঁড়ো করে নিন। নিম পাতা গুঁড়ো একটি কাচের যারে করে সংরক্ষণ করুন।
  • এক চামচ ইসবগুলের ভুষি এবং এক চা চামচের তিনভাগের এক ভাগ নিম পাতা গুড়ো এক গ্লাস পানিতে ৩০ মিনিটের মতো ভিজিয়ে রাখুন। ৩০ মিনিট পরে চামচ দিয়ে ভালোভাবে মিশ্রণ করে সকালে খালি পেটে নিয়মিত খেতে পারলে এলার্জি দূর হয়ে যাবে। একই নিয়মে রাতে ঘুমানোর আগেও এক গ্লাস খেতে পারেন।
  • কিছু কাঁচা নিমপাতা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। এরপরে ব্লেন্ডার দিয়ে ব্লেন্ড করে অথবা ভালোভাবে বেটে পেস্ট তৈরি করে নিন। পেস্ট তৈরি হয়ে গেলে এলার্জি আক্রান্ত স্থানে ভালোভাবে প্রলেপ দিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
  • ১৫ থেকে ২০ টি কাঁচা নিমপাতা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। এরপরে পরিমাণ মতো পানিতে নিম পাতাগুলো দিয়ে পানিটি ফুটিয়ে নিন। পানি ঠান্ডা হওয়ার পরে নিমপাতা গুলি ফেলে দিয়ে চায়ের মত ফুটন্ত পানি খেতে পারেন।
  • প্রতিদিন গোসলের পূর্বে কিছু নিম পাতা নিয়ে গরম পানি করে নিম পাতাগুলো সিদ্ধ করে নিন। এরপরে সিদ্ধ নিমপাতা গুলি ফেলে দিয়ে ওই পানি দিয়ে গোসল করলে এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

নিম পাতার ঔষধি গুনাগুন

নিম পাতার মধ্যে রয়েছে হাজারো ঔষধি গুনাগুন। নিমপাতা কে বিভিন্ন রোগের মহা ঔষধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। নিম পাতায় থাকা ঔষধি গুনাগুন গুলো মানুষের শরীরকে সুস্থ এবং স্বাবলম্বী করে তুলে। এবং শরীরের জটিল কঠিন রোগ থেকে মুক্তি দেয় নিম পাতা। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় নিম পাতার ব্যবহার সব থেকে বেশি হয়। শুধু আয়ুর্বেদিকই নয় হোমিওপ্যাথিক এবং এলোপ্যাথিক ওষুধেও নিম পাতার ব্যবহার হয়ে থাকে। নিম্নে নিম পাতার ওষধি গুনাগুন গুলো তুলে ধরা হলোঃ-
নিম-পাতার-ঔষধি-গুনাগুন.webp
  • ত্বক ফর্সা করতে সহায়তা করে।
  • দাঁতের যেকোনো সমস্যা দূর করে।
  • পেটের কৃমি ধ্বংস করে।
  • উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
  • হাঁপানি বা এজমা দূর করে।
  • গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
  • ক্যান্সার রোগের ঝুঁকি কমায়।
  • উকুন দূর করে চুল করে ঝলমলে উজ্জ্বল।
উপরে উল্লেখিত সমস্যাগুলোতে কিভাবে নিম পাতা ব্যবহার করবেন বা সেবন করবেন তা নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

ত্বকঃ রূপচর্চায় নিম পাতার ব্যবহার বহু আগে থেকেই হয়ে আসছে। ত্বকের মধ্যে থাকা যে কোন ধরনের দাগ দূর করতে নিম পাতা অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। মুখের ব্রণ দূর করতে নিমপাতা বেটে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগালে ব্রণ হয়ে যায়। এছাড়াও কাঁচা হলুদ এবং নিমপাতা দিয়ে তৈরি করা ফেসপ্যাক নিয়মিত ব্যবহারে মুখের ত্বক ফর্সা এবং উজ্জ্বল করে তুলে।

দাঁতের সমস্যাঃ দাঁতের যে কোন সমস্যা দূর করতে নিম গাছের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করুন। বর্তমান আধুনিক যুগে নিম গাছের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করা মানুষ ভুলেই গেছে। কিন্তু প্রাচীনকালে কোন ব্রাশ বা পেস্ট ছিল না। দাঁত পরিষ্কার এবং মজবুত করার জন্য একমাত্র হাতিয়ার ছিল নিম গাছের ডালের মেসওয়াক। নিয়মিত নিম গাছের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করলে দাঁতের যে কোন সমস্যা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

কৃমি দূর করেঃ পেটের কৃমি দূর করার জন্য নিম পাতার অবকাশ নেই। বিশেষ করে শিশুদের পেটের মধ্যে কৃমি হলে চেহারা কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে যায়। দেখতে রোগা রোগা লাগে। পেট বড় হয়ে যায়। নিয়মিত নিম পাতার রস খালি পেটে খেলে কৃমি নির্মূল হয়ে যায়।

উচ্চ রক্তচাপঃ নিমপাতায় রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এই অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া উপাদান মানুষের শরীরের রক্তকে পরিষ্কার করে যে কোন ধরনের জীবাণু দূর করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে তোলে। এবং উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।

হাঁপানি বা এজমাঃ অত্যন্ত কষ্ট কর একটি রোগ হলো হাঁপানি বা এজমা। হাঁপানি বা এজমা রোগ থেকে মুক্তির জন্য নিম পাতা অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এই ধরনের রোগে আক্রান্ত যারা রয়েছেন। আপনারা বাড়ির পাশে থাকা নিম গাছের ফল এবং বীজ থেকে তৈরিকৃত নিম তেল হাঁপানি রোগের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী।

গ্যাস্ট্রিকঃ বর্তমান সময়ের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। কেননা আমরা প্রতিনিয়ত যেসব খাবার খাচ্ছি সবই তেল যুক্ত মারাত্মক ক্ষতিকর। যা মানুষের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বৃদ্ধি করে। তাই এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার জন্য নিম পাতার ব্যবহার করতে পারেন। এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে গ্যাস্ট্রিক এবং আলসার রোগের জন্য নিম পাতা অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। গ্যাস্ট্রিক এবং আলসার দূর করার জন্য নিম গাছের ছাল গুড়ো করে পানির সাথে মিশিয়ে নিয়মিত খেলে গ্যাস্ট্রিক এবং আনসার রোগের সমাধান পাওয়া যাবে।

ডাডায়াবেটিসঃ য়াবেটিস বর্তমানে একটি কমন রোগ হিসেবে পরিচিত। কেননা বর্তমান প্রায় মানুষের ৪০ বছর বয়স পার হলেই ডায়াবেটিস দেখা দেয়। তাই ডায়াবেটিস দূর করতে নিম পাতার কোন জুড়ি নেই। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে নিম পাতা ব্যবহারে রক্তের শর্করার হ্রাস পায়। এবং নিম পাতা হাইপোগ্লাইসেমিকের প্রভাব প্রদর্শন করতে পারে। যার ফলে ডায়াবেটিসের রোগীরা নিম পাতা ব্যবহারে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ক্যান্সারঃ বর্তমান সময়ে ক্যান্সার রোগের আক্রান্ত ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। তাই ক্যান্সার রোগের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত নিম পাতা খাওয়ার অভ্যাস করা অত্যন্ত জরুরি। কেননা নিম পাতার মধ্যে পাওয়া যায় স্যাকারাইডস ও লিওমোনয়েডস নামক উপাদান। যে দুইটি উপাদান মানুষের শরীরের রক্ত থেকে ক্যান্সার এবং টিউমারের জীবাণু গুলিকে ধ্বংস করে দেয়। তাই আমাদের নিয়মিত নিম পাতা খাওয়ার অভ্যাস করার দরকার।

স্বাস্থ্যজ্জল চুলঃ উকুন এবং খুশকি দূর করার জন্য নিম পাতার ব্যবহারের তুলনা হয় না। উকুন এবং খুশকি দূর করার জন্য নিম পাতার রস করে গোসলের পূর্বে ভালোভাবে মাথার তালু এবং চুলে মেসেজ করুন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহারে উকুন এবং খুশকি দূর করবে। আর আপনার চুল হবে ঝলমলে উজ্জ্বল।

মুখের ব্রণ দূর করতে নিম পাতার ব্যবহার

বর্তমান সময়ে প্রায় যুবক যুবতীদের মুখে ব্রণ দেখা যায়। আর মুখের মধ্যে ব্রণ আসলে দেখতে কেমন যেন বিশ্রী লাগে। তাইতো প্রত্যেকেই চায় মুখের ব্রণ দূর করতে। আরে ব্রণ দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ফেসওয়াস এবং ক্রিম ব্যবহার করে থাকে। এত কিছু ব্যবহারের ফলেও যাদের মুখের ব্রণ দূর করা সম্ভব হয়না। তাদের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী ঘরোয়া একটি উপাদান হতে পারে নিমপাতা।

মুখের ত্বকের জন্য নিম পাতার ব্যবহার বোকা আগে থেকেই হয়ে আসছে। মুখে ব্রণ দূর করার জন্য নিম পাতা অত্যন্ত কার্যকরী প্রাকৃতিক একটি উপাদান। নিম পাতার মধ্যে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল, এবং প্রদাহবিরোধী উপাদানগুলো মুখের ব্রণ দূর করতে এবং ত্বককে পরিষ্কার রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। মুখের ব্রণ দূর করার জন্য কিভাবে নিম পাতা ব্যবহার করবেন নিম্নে তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলোঃ-

নিম পাতার পেস্ট

  • কিছু কাঁচা নিমপাতা নিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। এবং সে কথাগুলো হালকা পানি দিয়ে ব্লেন্ডারে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে অথবা শিলপাটাতে ভালোভাবে বেটে মিহি করে পেস্ট তৈরি করে নিন।
  • তৈরিকৃত পেস্ট মুখের ব্রণের উপরে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। এরপরে ২০ থেকে ২৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে খেয়ে ফেলুন। কার্যকরী উপকারের জন্য সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এই নিয়মে ব্যবহার করবেন।
  • এক মুঠ সমপরিমাণ নিম পাতা নিয়ে এক কাপ পানিতে দিয়ে পানি ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। এরপরে পানি ঠান্ডা হয়ে গেলে পানি ছেঁকে পাতাগুলি ফেলে দিন।
  • পাতা দিয়ে ফুটানো পানি কটন অথবা তুলো দিয়ে ব্রণের উপরে হালকা করে প্রয়োগ করুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরে ভালোভাবে মুখ দিয়ে ফেলুন।

মুলতানি মাটি ও দই দিয়ে নিম পাতার প্যাক

  • অল্প কিছু নিম পাতা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে পেস্ট তৈরি করে নিন। তৈরিকৃত পেস্টের সাথে মুলতানি মাটি নিন। দুইটি উপাদান ভালোভাবে মিশ্রণ করে পেস্ট তৈরি করুন।
  • তৈরিকৃত পেস্ট ব্রণের উপরে ভালোভাবে প্রলেপ দিন। এরপরে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন। ভালো ফলাফলের জন্য প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করুন।
  • কাঁচা তাজা একমুঠো পরিমাণ নিম পাতা নিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লান্ড করে পেস্ট তৈরি করুন। এরপরে নিম পাতার পেস্টের সাথে দুই থেকে তিন চামচ দই মিশিয়ে একটি ভালোভাবে তৈরি করে নিন।
  • তৈরিকৃত প্যাকটি মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। প্রপরের শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন। পুরোপুরি রেজাল্ট পাওয়ার জন্য সপ্তাহে দুই দিন কমপক্ষে এক মাস ব্যবহার করুন।

চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার

ঝলমলে স্বাস্থ্যোজ্জল সুন্দর চুল কে না পছন্দ করে। বিশেষ করে প্রতিটি মেয়ে চায় লম্বা ঝলমলে স্বাস্থ্যজ্জল সুন্দর চুল। আর এই ঝলমলে সুন্দর চুল করার জন্য ব্যবহার করে থাকে নানা রকমের শ্যাম্পু অথবা তেল। তারপরেও দেখা যায় খুব একটা ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না। আপনারা চাইলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে নিম পাতা ব্যবহার করে ঝলমলে স্বাস্থ্যজ্জ্বল সুন্দর চুল করতে পারেন। চুলকে সুন্দর করার জন্য নিম পাতার ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

চুলের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করতে নিম পাতা অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। নিম পাতার মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই উপাদান গুলি চুলকে করে খুশকি মুক্ত এবং চুলের গোড়া থেকে পুষ্টি যুগিয়ে চুলকে মজবুত করে তোলে। চুলে নিম পাতা ব্যবহারে কি কি উপকার হয় তা নিম্ন বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলঃ-

খুশকি দূর করেঃ নিমপাতা ফুলের খুশকি দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। একমুঠো সমপরিমাণ নিম পাতা নিয়ে অল্প পরিমাণে পানি দিয়ে ভালোভাবে বেটে ভালোভাবে চুলের স্ক্যাল্পে লাগিয়ে নিন। এরপরে আধা ঘন্টার মত অপেক্ষা করুন। ৩০ মিনিট পরে শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে চুল ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের খুশকি নির্মূল হয়ে যাবে।

চুল পড়া বন্ধ করেঃ চুল পড়া একটি মহা সমস্যা। চুল পড়া কমাতে নিম পাতা রস করে স্ক্যাল্পে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। একঘন্টা পরে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। নিম পাতার মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের গোড়া থেকে পুষ্টিযোগিয়ে চুলকে মজবুত করে এবং চুল পড়া বন্ধ করে।

চুল লম্বা করেঃ চুল লম্বা করতে নিম পাতার রস এবং নারিকেল তেল একসাথে মিশ্রন করে গরম করে নিন। ঠান্ডা হওয়ার পরে সংরক্ষণ করে রেখে দিন। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন রাতে ঘুমানোর সময় মাথায় ভালোভাবে লাগিয়ে নিন এবং সকালে ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহারে চুল লম্বা হতে সহায়তা করে।

চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করেঃ চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে নিম পাতা ব্যবহার করতে পারেন। এক কাপ সমপরিমাণ নিম পাতা নিয়ে পানিতে সিদ্ধ করে নিন। পানি ঠান্ডা হয়ে গেলে সিদ্ধ নিম পাতাগুলো ফেলে দিন। এবং নিম পাতা সিদ্ধ পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।

ত্বকের তৈলাক্ত দূর করতে নিম পাতার ব্যবহার

ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে নিম পাতা ব্যবহারকার প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। নিমপাতা এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা খুব সহজেই ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সহায়তা করে। নিম পাতার মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যে উপাদান ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করে, ত্বকের যাবতীয় সমস্যা দূর করে তোকে সুস্থ ও উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে। মুখের তৈলাক্ত ভাব দূর করার জন্য নিম পাতার ব্যবহারের কিছু নিয়মাবলী নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলোঃ-

  • কাঁচা নিমপাতা এবং অল্প পরিমাণে পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে একটি মসৃণ টেস্ট তৈরি করুন। তৈরি কৃত পেস্টটি ত্বকের মধ্যে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। আধা ঘন্টা অপেক্ষা করুন। এরপরে ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করে ফেলুন। এইভাবে নিয়মিত ব্যবহারে মুখের অতিরিক্ত দূর করবে।
  • কয়েকটি নিমপাতা এবং মুলতানি মাটি একত্রিত করে ব্লেন্ড দিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এরপরে বেস্ট মুখে এবং গলায় ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। ২৫ থেকে ৩০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। এই ভাবে নিয়মিত ব্যবহার করতে পারলে ত্বকের অতিরিক্ত দূর করে তক্তের সতেস করবে।
  • কয়েকটি নিমপাতা এক কাপড় পরিমান পানিতে দিয়ে ভালোভাবে পানি ফুটিয়ে নিন। পানি ঠান্ডা হয়ে গেলে পাতাগুলি ফেলে দিয়ে পানি বোতলের সংরক্ষণ করে রাখুন। প্রতিদিন সকালে মুগ্ধ ধোয়ার পরে ওই পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের পি এইচ মাত্রা ঠিক থাকবে এবং ত্বক হবে মসৃণ ও উজ্জ্বল।
  • ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে নিম পাতার তৈরি স্ক্রাব ব্যবহার করুন। নিম পাতার স্ক্রাব তৈরি করতে কিছু নিমপাতা ভালোভাবে শুকিয়ে গুঁড়ো তৈরি করুন। এবং নিম পাতাগুলোর সাথে চিনি ও মধু মিশ্রণ করে স্ক্রাব তৈরি করে ফেলুন। এই মিশ্রণটি মুখে হালকা ভাবে লাগিয়ে নিন। এটি ত্বকের ময়লা ও জীবাণু দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল ও পরিষ্কার করে তুলবে।
  • ত্বকের তৈলাক্ত আদ্রতা দূর করতে নিম পাতার জেল ব্যবহার পড়ে দেখতে পারেন। নিম পাতার জেল তৈরি করতে প্রথমে কিছু নিম পাতা ব্লেন্ড করে পেস্ট তৈরি করুন। তৈরিকৃত পেস্ট ফ্রিজে রেখে দিন এরপরে প্রতিদিন মুখ ধরার পরে এই জেল মুখে লাগিয়ে রাখুন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখবে তৈলাক্ত কমিয়ে দিবে।
  • ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে নিম পাতা দিয়ে ফেসওয়াশ তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। নিমপাতা দিয়ে ফেসওয়া তৈরি করার জন্য কিছু নিমপাতা ব্লেন্ড করে নিয়ে সাথে বেসন মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ফেলুন। ব্যাস হয়ে গেল ফেসওয়া প্রতিদিন মুখ ধোয়ার জন্য এই ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন। নিম পাতার এই ফেসওয়াশ ব্যবহারের ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর হয়ে যাবে।

নিম পাতার ক্ষতিকর দিক

প্রতিটি জিনিসের যেমন উপকার রয়েছে তেমনি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। অতএব প্রাকৃতিক কোন উপাদান ব্যবহারের পূর্বে আপনার কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরী। যদি কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। তেমনিভাবে নিম পাতার উপকারের পাশাপাশি কিছু ক্ষতিকর দিক বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এখন আমরা জানবো নিম পাতার ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে।
  • কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে নিম পাতা সরাসরি ব্যবহার করার ফলে ত্বকের জ্বালাপোড়া বা এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী নারীদের নিমপাতা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা দরকার কেননা এটি গর্ভপাতের মত বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। এবং গর্ভের শিশুর ক্ষতির কারণ হতে পারে।
  • শিশুদের জন্য নিম পাতা বা নিম তেল ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখা দরকার কেননা এটি ব্যবহারের ফলে তাদের শরীরে জ্বালাপোড়া হতে পারে।
  • ডায়াবেটিসের রোগীদের নিম পাতা ব্যবহারে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে কেননা নিমপাতা রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয়। আর ডায়াবেটিসের রোগীদের রক্তের শর্করা মাত্রা অতিরিক্ত কমে গেলে দুর্ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

লেখকের শেষ কথা

এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। আজকের আর্টিকেলে আমরা আরো জানতে পেরেছি নিম পাতার ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে, এবং নিমপাতা ব্যবহারবিধি ও নিম পাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে। উপরোক্ত বর্ণনা কৃত সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়ার জন্য অবশ্যই সঠিক নিয়ম মেনে ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হলো।

আজকে আর্টিকেল পড়ে যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। কেননা আমরা নিয়মিত স্বাস্থ্য সচেতন মূলক আর্টিকেল পোস্ট করে থাকি। আমাদের আর্টিকেল পরে উপকৃত হলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। সময় দিয়ে সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এস এম ট্রপিক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url