রাসেল ভাইপার সাপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

রাসেল ভাইপার সাপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন? বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের বেশ কিছু জেলায় আতঙ্কের এক নাম রাসেল ভাইপার। চলুন আজকের আর্টিকেলে রাসেল ভাইপার সব সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
রাসেল-ভাইপার-সাপ-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন.webp
রাসেল ভাইপার সাপ বাংলাদেশ থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় রাসেল ভাইপার সাপ দেখা যাচ্ছে এবং অনেক মানুষ রাসেল ভাইপার সাপের দংশনে মৃত্যুবরণ করেছে। তাই আজকে আর্টিকেলে রাসেল ভাইপার সাপ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

পোস্ট সূচিপত্রঃ রাসেল ভাইপার সাপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

রাসেল ভাইপার সাপ সম্পর্কে অজানা তথ্য

পৃথিবীতে বিষধর সাপগুলোর মধ্য থেকে অন্যতম একটি সাপ হল রাসেল ভাইপার। রাসেল ভাইপার সাপ বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন- চন্দ্রবোড়া, চেইন ভাইপার, দাবোয়া, ইত্যাদি নামে পরিচিত। রাসেল ভাইপার সাব এশিয়া মহাদেশের বেশ কিছু অঞ্চলে দেখা যায়। যেমন- শ্রীলংকা, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, এবং থাইল্যান্ডে বেশি পরিমাণে দেখা যায়।

রাসেল ভাইপার সাপের শরীরের উপরে বিশেষ ধরনের ফোটা চিহ্ন এবং তীরের মত চিহ্ন থাকে। এইসব চিহ্ন দেখে সহজেই রাসেল ভাইপার সাপ চেনা যায়। রাসেল ভাইবার সাপ দেখতে অনেকটা অজগর সাপের মত। তাই অনেক সময় মানুষ অজগর সাপ মনে করে রাসেল ভাইপার সাপ ধরতে যায় এবং তার দংশনের শিকার হয়।এই সাব চর এলাকায় বেশি থাকে এবং বড় বড় ঘাসের মধ্যে লুকিয়ে থাকে।

কেননা ওই ঘাসের মধ্যে পোকামাকড় তাদের প্রধান খাদ্য। রাসেল ভাইপার সাপ দেখতে বেশ মোটাসোটা হয়ে থাকে তবে লেজ সরু এবং ছোট হয়। রাসেল ভাইপার সাপ প্রায় ৪/৫ ফুট লম্বা হয়। রাসেল ভাইবার সাপের মাথাটা চ্যাপ্টা এবং গলা মাথার থেকে কিছুটা চিকন হয়ে থাকে। এ সাপের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে বিষ হয়েছে।

রাসেল ভাইপার সাপ কামড় দিলে দ্রুত চিকিৎসা না নিলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ পতঙ্গ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। বিশেষ করে কিডনি এবং প্যারালাইসিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রাসেল ভাইপার সাপের দংশনে মৃত্যুও হতে পারে।

রাসেল ভাইপার সাপ কোন কোন জায়গায় থাকতে পারে

রাসেল ভাইবার সাপ মূলত ঘন ঘাস ঝোপ ও ফসলের ক্ষেতে বসবাস করে। তবে এরা স্বীকার করার জন্য উঁচু ঘাসের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। এবং পোকামাকড় শিকার করে। এছাড়াও বাড়ির আশেপাশে ময়লা আবর্জনা যুক্ত স্থানে রাসেল ভাইপার অবস্থার করতে পারেন। বাংলাদেশ থেকে এক সময় রাসেল ভাইবার প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। তবে রাজশাহী জেলার কিছু কিছু জায়গায় মাঝেমধ্যে এইসব দেখা যেত।

কিন্তু ইদানিং কালে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় রাসেল ভাইবার সাপের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জ কুষ্টিয়া রাজবাড়ী ফরিদপুর মানিকগঞ্জ চাঁদপুর ভোলা হাতিয়া রংপুর দিনাজপুর সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় এইসব ছড়িয়ে পড়েছে। এই সমস্ত জেলার মধ্যে প্রায় সময় রাসেল ভাইপার সাপ দেখা যাচ্ছে এবং মানুষ কৃষি খেতে কাজ করতে গিয়ে রাসেল ভাইপার সাপের দংশনের শিকার হচ্ছে।

কয়েকটি জেলায় বেশ কয়েকজন মানুষের রাসেল ভাইপার এর কামড়ে মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞগণ বলেন বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের বন জঙ্গল পরিষ্কার করে ফেলার কারণে রাসেল ভাইপার সাপ কৃষি ক্ষেত খামারের দিকে চলে আসছে। কেননা কৃষি ক্ষেত খামারে প্রচুর পরিমাণে ইঁদুর থাকে। বিশেষ করে ধান ক্ষেতের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ইঁদুর হয়। আর ইঁদুর রাসেল ভাইপার সাপের প্রধান খাদ্য।

তাই পদ্মা নদীর আশেপাশের জেলাগুলি ধান ক্ষেতের মধ্যে রাসেল ভাইপার সব রায় দেখা যাচ্ছে। এবং কি বেশ কয়েকজন কৃষক ধান কাটতে গিয়ে রাসেল ভাইপার সাপের দংশনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তাই অনেক কৃষক কৃষি ক্ষেতে যেতে ভয় পাচ্ছে। তাই অবশ্যই কৃষি খেতে যাওয়ার সময় অত্যন্ত সচেতন এর সহিত কাজ করতে হবে এবং ভালোভাবে খেয়াল রাখা উচিত।

রাসেল ভাইপার সাপ যদিও শুকনো স্থানে বসবাস করে কিন্তু পানিতে খুব দ্রুত চলতে পারে এইসাপ। বিশেষ করে নদীতে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাওয়ার জন্য রাসেল ভাইপার সাপ কচুরিপানার সাহায্য নিয়ে থাকেন। কচুরিপানার উপরে বসে নদীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে রাসেল ভাইপার সাপ যায়।

রাসেল ভাইপার সাপ কেন দংশন করে

প্রাকৃতিকভাবেই মানুষ সাপ দেখে ভয় পায়। ঠিক তেমনি মানুষকে দেখেও সাপ প্রচুর পরিমাণে ভয় পায়। প্রায় সব প্রজাতির সাপ মানুষ দেখলে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু রাসেল ভাইপার সাপের বেলায় একটু ভিন্ন। মানুষের উপস্থিতি টের পেলে রাসেল ভাইপার সাপ পালানোর পরিবর্তে নিজ স্থানেই থাকে। অনেকেই বলেছেন রাসেল ভাইপার সাপ অনেকটা অলস প্রকৃতির যার কারণে মানুষের উপস্থিতি টের পেয়েও সে পালানোর চেষ্টা করে না।

তাই অনেক সময় মানুষ অজান্তেই এই সাপের উপরে পাড়া দিয়ে দিয়ে থাকে। অথবা এসবকে দেখার পরে সব মনে করে অনেকেই ধরতে যায়। আর তখনই রাসেল ভাইপার সাব মানুষকে দংশন করে। রাসেল ভাইবার সাব অত্যন্ত দ্রুততার শহীদ দংশন করে। তাই রাসেল ভাইপার সাপ দেখার পরে সহজে এটার ধারে কাছে যাবেন না। কেননা এই সাপের দংশনে ইদানিং বেশ কিছু মানুষের মৃত্যু ঘটছে।

রাসেল ভাইপার সাপ কতটা বিষধর

অনেকেই বলে থাকেন রাসেল ভাইপার সাপ পৃথিবীর পঞ্চম তম বিষধর সাপ। তবে এই কথা সঠিক নয়। কেননা বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন রাসেল ভাইপার সাপ বিষধর সাধ্যের মধ্যে রেটিং এ ৩০ এর মধ্যেও নেই। আরো বলেন বাংলাদেশের গোখরা সাপের বিষের থেকেও পরের স্থানে রয়েছে। বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন গোখরা সাপ কামড় দিলে মানুষ ৮ ঘন্টা পরে মৃত্যুবরণ কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
রাসেল-ভাইপার-সাপ-কতটা-বিষধর.webp
আর রাসেল ভাইপার এর ব্যাপারে বলেছিলেন যদি দংশন কৃত ব্যক্তির অন্য কোন সমস্যা না থাকে তাহলে ৭২ ঘণ্টার আগে রোগী সহজে মারা যাওয়ার কথা না। তবে রাসেল ভাইবার সাপের বিষের মধ্যে প্রায় চার পাঁচটি বিষধর উপাদান রয়েছে। যা মানুষের রক্তকে জমা বাদিয়ে দেয় এবং কিডনি নষ্ট করে দেয়। এছাড়াও লিভার সহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ পতঙ্গ অচল করে দেয়।

রাসেল ভাইপার সাপ দংশনের পরে দংশনকৃত স্থানে দ্রুত খুলে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফুলে যায়। তাই রাসেল ভাইপার সাপ কামড় দেওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসা নেওয়া জরুরী। রাসেল ভাইপার সাপ দংশন করার রোগীকে চিকিৎসা নিতে দেরি করলে। অ্যান্টিভেনম দেওয়ার পরেও মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনও দেখা গিয়েছে রাসেল ভাইপার সাপ দংশন করা রোগী ২৫ দিন পরেও মারা গিয়েছে।

তাই রাসেল ভাইপার সব দংশন করলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নিন। অনেকেই রয়েছে সাপ কামড় দিলে বিভিন্ন বোঝার কাছে যায় এবং বোঝা ঝাড়ফুক করে সে বিষ নামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটে তাই যেকোনো ধরনের সাপ কামড় দিলে দ্রুত মেডিকেল হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসার নেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।

রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ের লক্ষণ

অনেক সময় সাপ দংশন করার পরে আমরা সাপ দেখতে পাই না। যার কারণে কি সাপ কামড় দিয়েছে তা বলতেও পারিনা। আমরা যদি সাপ দংশনের পরে হাসপাতালে যায়। আর যদি কি সাপ কামড় দিয়েছে সেটা বলতে পারি তাহলে ডাক্তারদের চিকিৎসা সহজ হয়। এবং দ্রুত ওই সাপের অ্যান্টিভেনম দিয়ে চিকিৎসা করে। রাসেল ভাইপার সাপ কামড় দিলে কিছু লক্ষণ দেখা যায়। এই সমস্ত লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে রাসেল ভাইপার সাপ কামড় দিয়েছে। রাসেল ভাইপার সাপ দংশন করার পরে যেসব লক্ষণ দেখা যায় তুলে ধরা হলো:-

  • রাসেল ভাইবার সব কামড় দিলে দ্রুত তীব্র ব্যথা শুরু হয় এবং যে জায়গায় দংশন করে ওই জায়গা ফুলে যায়।
  • রাসেল ভাইপার সাপের বিষের প্রভাবে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এবং কি দাঁতের মাড়ি, নাক, এছাড়াও মলদ্বার দিয়ে রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা, পেশিতে ব্যথা, দুর্বলতা, চোখে ঝাপসা দেখা, শরীরে প্রচুর পরিমাণে ঘাম ঝরা সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
  • রাসেল ভাইপার সাপ দংশনে গুরুতর কিছু সমস্যা দেখা দেয়। কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া, হৃদস্পন্দন কমে যায়, শ্বাসকষ্ট দেখা যায়, এবং কি মৃত্যুও ঘটতে পারে।

বিষধর সাপ কামড় দিলে প্রাথমিক অবস্থায় করণীয়

রাসেল ভাই সাব যেহেতু নিঃসন্দেহে কি বিষধর সাপ অতএব যে কোন বিষধর সাপ কামড় দিলে আতঙ্কিত না হয়ে শান্ত থাকুন। এরকম অনেক মানুষ দেখা সাপ কামড় দেওয়ার পরে আতঙ্কিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তাই যেকোনো ধরনের সাপ কামড় দিলে ওই ব্যক্তিকে আতঙ্কিত হওয়া থেকে বিরত রাখুন। বাংলাদেশের বেশিরভাগ সাপ বিষধর নয়। হাতে গোনা কয়েকটি বিষধর সাপ রয়েছে।
বিষধর-সাপ-কামড়-দিলে-প্রাথমিক-অবস্থায়-করণীয়.webp
তাই সাপ কামড়ানোর পরে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থা করুন। সাপ কামড়ালে সর্বপ্রথম সাপে কামড়ানো জায়গায় পরিষ্কার কাপড় কতা ব্যান্ডেজ জাতীয় কোন কিছু দিয়ে ক্ষতস্থান ঢেকে দিন যেন ধুলোবালি না পড়ে। সাপ কামড়ের পরে যদি উপরে নিচে দুটি দাঁত ক্ষত হয় তাহলে বুঝবেন কোন বিষধর সাপ কামড় দিয়েছে।

আর যদি অনেকগুলি দাঁতের চিহ্ন থাকে তাহলে বুঝতে হবে সাধারণ কোন সাপ কামড় দিয়েছে। বিষধর সাপ কামড় দিলে ক্ষতস্থানের উপরে কাপড় অথবা গামছা দিয়ে হালকা করে বেধে দিন খুব বেশি শক্ত করে বাঁধবেন না। অনেক সময় দেখা যায় সাপে কামড় দেওয়ার পরে বিভিন্ন ওঝার কাছে রোগীকে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ঝাড়ফুঁক করে বিঢ নামানোর চেষ্টা করে।

এক্ষেত্রে অনেক সময় বিষমুক্ত হয় না তাই এভাবে সময় নষ্ট না করে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসার নেওয়ার ব্যবস্থা করুন। অনেকেরই ধারণা মুখ দিয়ে টেনে সাপের বিষ বের করে ফেলে দিবে। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা সাপের বিষ যদি আপনার মুখের ভিতরে চলে যায় তাহলে আপনিও মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অতএব কোন বিষধর সাপ কামড় দিলে এদিকে সময় নষ্ট না করে দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে ভালো ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা করুন।

লেখকের শেষ কথা

রাসেল ভাইপার সাপ সম্পর্কে আজকে আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত জানলাম। রাসেল ভাইপার সাপ দংশনে কি কি লক্ষণ দেখা যায় সে সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আরো জেনেছি রাসেল ভাইবার সাপের বিষ কতটা ভয়ংকর সে সম্পর্কে। রাসেল ভাইপার সাপ কামড় দিলে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হল।

আজকে আর্টিকেল পড়ে যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। কেননা আমরা নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটে নতুন নতুন আর্টিকেল লিখে থাকি। আমাদের আর্টিকেল পড়ে উপকৃত হলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। সময় দিয়ে সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এস এম ট্রপিক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url